ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

0
423
ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ধারার পথিকৃৎ। এটি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামি ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৯৮৩ সালের ১৩ই মার্চ কোম্পানি আইন, ১৯১৩-এর অধীনে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংক যার ৩৬.৯১% স্থানীয় এবং ৬৩.০৯% বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। মোট ৪৫০ টি শাখা নিয়ে এই ব্যাংকটি দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূলধনি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন ২০,০০০ মিলিয়ন টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৬,৬৩৬.২৮ মিলিয়ন টাকা।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
ধরন
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক
শিল্প ব্যাংকিং, অর্থনৈতিক সেবা
প্রতিষ্ঠাকাল ঢাকা, বাংলাদেশ (১৩ মার্চ, ১৯৮৩)
সদরদপ্তর ৪০, দিলকুশা, ঢাকাবাংলাদেশ
বাণিজ্য অঞ্চল
বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব
প্রধান ব্যক্তি
প্রফেসর মো: নাজমুল হাসান, পিএইচডি
(চেয়ারম্যান)
মোঃ আব্দুল হামিদ মিয়া
(ব্যবস্থাপনা পরিচালক)
পণ্যসমূহ ব্যাংকিং সেবা (সার্ভিসেস),
এটিএম সেবা,
গ্রাহক (কনজ্যুমার) ব্যাংকিং,
ব্যবসায়িক (কর্পোরেট) ব্যাংকিং,
বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট) ব্যাংকিং
আয় বৃদ্ধি ২৫.৪০৩ বিলিয়ন টাকা
(০.৩৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)
নীট আয়
বৃদ্ধি ৬.৫১৮ বিলিয়ন টাকা
(০.০৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)
{ডিসেম্বর ২০১০}
মোট সম্পদ বৃদ্ধি ৩৪০.৬৩৮ বিলিয়ন টাকা
(৪.৮৬৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
{ডিসেম্বর ২০১০}
মোট ইকুইটি বৃদ্ধি ৩৩.৭১৬ বিলিয়ন টাকা
(০.৮১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)
কর্মীসংখ্যা
১৩,২২৯
ওয়েবসাইট ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

ইতিহাস

  • সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের মানুষের বহু পুরনো প্রত্যাশা। বিশ শতকের ষাটের দশকে মিসরের মিটগামারে প্রথম সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশেও এরূপ একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সক্রিয় হয়। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির চার্টার স্বাক্ষর করে। ১৯৭৬ সালে প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তানায়ক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীমের নেতৃত্বে ঢাকায় ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭৯ সালে নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মহসিন দুবাই ইসলামি ব্যাংকের অনুরূপ বাংলাদেশে একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে সুপারিশ করেন। এর পরপরই ডিসেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং উইং বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিমত জানতে চায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন গবেষণা পরিচালক এ এস এম ফখরুল আহসান ১৯৮০ সালে ইসলামি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য দুবাই ইসলামি ব্যাংক, মিসরের ফয়সাল ইসলামি ব্যাংক, নাসের সোশ্যাল ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক সমিতির কায়রো অফিস পরিদর্শন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।

১৯৮০ সালের ১৫-১৭ ডিসেম্বর ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরোর উদ্যোগে ঢাকায় ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের মার্চে ওআইসিভূক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের সম্মেলন সুদানের রাজধানী খার্তুমে অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে পেশকৃত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। ১৯৮১ সালে এপ্রিল মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লেখা এক পত্রে পাকিস্তানের অনুরূপ বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতেও পরীক্ষামূলকভাবে পৃথক ইসলামি ব্যাংকিং কাউন্টার চালু করে এ জন্য পৃথক লেজার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

১৯৮১ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর এক মাস স্থায়ী সার্বক্ষণিক আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। এ কোর্সে বাংলাদেশ ব্যাংক, সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিআইবিএম ও প্রস্তাবিত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড)-এর ৩৭ কর্মকর্তা অংশ নেন।

১৯৮২ সালে নভেম্বর মাসে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আইডিবির অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার ব্যাপারে ‘ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরো’ (আইইআরবি) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক সমিতি (বিবা) অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বহুমাত্রিক চেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ করা হয় এবং এ নামেই তখন পর্যন্ত ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও প্রচার-পুস্তিকা ব্যবহার করা হয়।

আলহাজ্ব মফিজুর রহমান ২৯ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এরপর ৩০ মার্চ থেকে এ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকের মনোগ্রাম তৈরি করেন শিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার সবিহউল আলম। এক্ষেত্রে ১৯জন বাংলাদেশি ব্যক্তিত্ব, ৪টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এবং আইডিবিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ১১টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থা এবং সৌদি আরবের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তারূপে এগিয়ে আসেন।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো

পরিচালনা পর্ষদ

  • প্রফেসর আবু নাসের মুহাম্মদ আব্দুজ জাহের
  • ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল-রাজী
  • ইঞ্জিনিয়ার মুস্তফা আনোয়ার
  • আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-রাজী
  • ডক্টর আব্দুল হামিদ ফুয়াদ আল খতিব
  • ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ ইস্কান্দার আলী খান
  • মুহাম্মদ আব্দুল হোসেন
  • ডক্টর আরিফ সুলেমান
  • মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল জালাহমা

শরিয়াহ পরিদর্শন কমিটি

  • শেখ মাওলানা মুহাম্মদ কুতুবউদ্দীন
  • মুফতি সাইদ আহমেদ
  • মুফতি শামছুদ্দিন জিয়া
  • প্রফেসর ডক্টর আবু বকর রফিক
  • প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
  • আব্দুর রাকিব
  • মাওলানা আব্দুস শহীদ নাসিম
  • ডক্টর হাফেজ মাওলানা হাসান মুহাম্মদ মঈনউদ্দীন
  • ডক্টর এ. এস. এম. তরিকুল ইসলাম
  • ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ
  • ডক্টর মঞ্জুর-ই-ইলাহী
  • মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী

প্রধান অংশীদারগণ

  • ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)
  • জেপি মরগ্যান চেজ & কো.
  • দুবাই ইসলামী ব্যাংক,
  • কুয়েত ফিন্যান্স হাউস
  • লুক্সেমবার্গ ইসলামী ব্যাংক
  • কুয়েতের তিনটি মন্ত্রণালয়।

ব্যাংকটির ৬৩% শেয়ার উপরিউক্ত অংশীদারগণের আর বাকি ৩৭% এর মালিকানা বাংলাদেশের ৬০,০০০ শেয়ারহোল্ডারগণ।

পুরস্কার

  • দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ইসলামী ব্যাংককে “সার্ক অ্যানিভ্যার্সারি এওয়ার্ড ফর কর্পোরেট গভর্নেন্স” এর প্রথম পুরস্কারে ভূষিত করে এবং ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল সময়ে শ্রেষ্ঠ ইসলামীক ব্যাংক পুরস্কার লাভ করে।

বিশ্বের শীর্ষ ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় ইসলামী ব্যাংক

  • যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শতাব্দী পুরাতন অর্থনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’ তাদের জুলাই ২০১২ সালে প্রকাশিত সংখ্যায় এই ব্যাংকটিকে বিশ্বের ১০০০ শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাংক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।

সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বৃহৎ পরিসরে সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংকটি ৩৮ মিলিয়ন টাকা ফান্ডের ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন নামে পৃথক একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর পক্ষে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন সামাজিক কল্যাণ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমসমূহ মধ্যে রয়েছঃ

  • ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল
  • ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী
  • কমিউনিটি হাসপাতাল
  • মনোরোমঃ ইসলামী ব্যাংক নৈপুণ্য ও ফ্যাশন ঘর
  • সেবা কেন্দ্র
  • ইসলামী ব্যাংক প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট
  • ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজ
  • ইসলামী ব্যাংক ফিজিথেরাপী ও পক্ষাঘাত পূনর্বাস্ন কেন্দ্র
  • উন্নয়ন আলোচনা কেন্দ্র
  • বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

সমালোচনা

  • ইসলামী ব্যাকের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কর্মীর মধ্যে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নেই। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ধর্মীয় ভিত্তিতে এরা লোক নিয়োগ করে থাকে। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ কোন বিভেদ করা যাবে না মর্মে উল্লেখ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here